হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়: মানুষের শরীরে রক্তের অভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এটি প্রতিরোধ করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত হলে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না।
স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
বিশেষজ্ঞদের মতে:
- পুরুষদের জন্য: ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম/ডিএল।
- প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য: ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডিএল।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য: ১১ বা তার বেশি গ্রাম/ডিএল স্বাভাবিক ধরা হয়।
যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক কমে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন।
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারন
- আয়রনের অভাব: শরীরে আয়রনের ঘাটতি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- ভিটামিনের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে।
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: দুর্ঘটনা, পাইলস, পেটে আলসার, বা মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
- গুরুতর রোগ: ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, এইডস, লিভার সিরোসিস বা টিউমারের মতো রোগ হিমোগ্লোবিন কমানোর জন্য দায়ী।
- জিনগত রোগ: থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া।
আরও পড়ুন: 2025 সালে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য 15 টি ঘরোয়া টিপস
হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, লাল শাক, কলা, ডিমের কুসুম, লাল মাংস ইত্যাদি খাওয়া।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (লেবু, কমলালেবু) গ্রহণ, কারণ এটি আয়রনের শোষণ বাড়ায়।
- ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্রকলি, ডাল, মটরশুটি খাওয়া।
- রোজ ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা।
আরও পড়ুন: ১ দিনে মাসিক হওয়ার উপায় সহজ পদ্ধতি
যদি হিমোগ্লোবিন অত্যন্ত কমে যায়
স্বাভাবিক মাত্রার থেকে খুব বেশি কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ
- প্রতিদিনের কাজ করতে গেলে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া।
- হালকা পরিশ্রমে বা হাঁটাহাঁটিতে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- চামড়ার রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
- হাত-পায়ের ঠান্ডা অনুভূতি।
- বুক ধড়ফড় করা বা হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া।
কখন রক্ত দেওয়া প্রয়োজন
- হিমোগ্লোবিন মাত্রা ৭ গ্রাম/ডিএল বা তার কম হলে।
- অত্যধিক রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে: দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার বা প্রসবের সময়।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য: হিমোগ্লোবিন ৯ গ্রাম/ডিএল এর নিচে হলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত দিতে হতে পারে।
- থ্যালাসেমিয়া বা লিউকোমিয়ার মতো রোগ: রোগীদের প্রায়শই রক্ত দেওয়া প্রয়োজন হয়।
হিমোগ্লোবিন কম হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে
- অক্সিজেন পরিবহনে ব্যাঘাত: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না।
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়।
- মানসিক অবসাদ: একটানা ক্লান্তির কারণে মনোযোগের ঘাটতি এবং বিষণ্নতা।
- অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি: গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
রক্ত দেওয়ার আগে করণীয়
- পরীক্ষা: হিমোগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপ এবং অন্যান্য রক্তের উপাদান পরীক্ষা করতে হবে।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: রক্ত দেওয়া শরীরের জন্য উপকারী হবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা: রক্ত দেওয়ার পর হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পরামর্শ
- আয়রন সাপ্লিমেন্ট: চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ গ্রহণ।
- পুষ্টিকর খাবার: আয়রন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম।
- রেগুলার চেকআপ: প্রতি ৩-৬ মাসে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করুন।
Join Our Facebook Page: Click Here
হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়
হিমোগ্লোবিন কত কম হলে রক্ত দেওয়া দরকার
সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি ৭ গ্রাম/ডিএল বা তার কম হয়, তবে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ভর করে।
হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য দ্রুত ফল পেতে কী করতে পারি
আয়রন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
গর্ভবতী নারীদের হিমোগ্লোবিন কত থাকা উচিত
গর্ভবতী নারীদের জন্য ১১ বা তার বেশি হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক ধরা হয়। এর থেকে কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত থাকা উচিত
৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১১ গ্রাম/ডিএল বা তার বেশি হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন।